নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫ | প্রিন্ট | 170 বার পঠিত
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তার অন্যতম সহযোগী খোকন গোপন জায়গায় অবস্থান করে অবৈধভাবে কোম্পানিটির আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করছেন- কোম্পানিটির ছয় উদ্যোক্তা পরিচালকের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নামল বিএসইসি।
পরিচালকদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান সাঈদ খোকন সম্পূর্ণ আর্থিক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব বজায় রেখে অজ্ঞাত স্থান থেকে অবৈধভাবে কোম্পানিটি পরিচালনা করছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি । কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফারুক হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান রনি, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মিনহাজ বিন সালিম এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ম্যানেজার মো. গিয়াস উদ্দিন। এই কমিটির ওপর নথিপত্র পর্যালোচনা করে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ভার দেওয়া হয়েছে। গত ৯ নভেম্বর গঠিত এই কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিএসইসিতে অভিযোগকারী ছয় উদ্যোক্তা পরিচালকের মধ্যে রয়েছেন তোফাজ্জেল হোসেন, এম. তাজুল ইসলাম, গাজী বেলায়েত হোসেন, আব্দুল হালিম, শায়লা পরভীন, আসমা নূর।
ছয় উদ্যোক্তা পরিচালকের অভিযোগ , সাঈদ খোকন ২০১২ সালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কোম্পানিতে স্বৈরাচারী চর্চা শুরু হয়। তারা জানান, কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই তাদের ছয়জন সাবেক স্পন্সর পরিচালককে বোর্ড থেকে অপসারণ করা হয়। তাদের স্থানে চেয়ারম্যান তার স্ত্রী, দুই মেয়ে, শ্যালিকা এবং তার নিজস্ব দুটি কোম্পানির প্রতিনিধিকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করেন। বর্তমানে পারিবারিক-সম্পর্কিত পরিচালকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে, যারা সম্মিলিতভাবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের প্রায় ৩০.৩৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের অভিযোগ, এই পারিবারিক কেন্দ্রীভূত শেয়ারহোল্ডিং এবং ব্যবস্থাপনা কাঠামো কোম্পানি আইন, বীমা আইন এবং সিকিউরিটিজ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ খোকন একটি অপ্রকাশিত স্থানে অবস্থান করছেন, সেখান থেকেই তিনি কোম্পানির মিটিং পরিচালনা করছেন, সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং আর্থিকসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করে চলেছেন। সাবেক পরিচালকরা বলছেন, এই ধরনের আচরণ কর্পোরেট গভর্নেন্স নীতি এবং কোম্পানি ব্যবস্থাপনার মৌলিক নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তারা আরও অভিযোগ করেন, কোম্পানির সচিব ও পরিচালক নুর মোহাম্মদ মামুন চেয়ারম্যানকে এই একতরফা সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছেন, যা কার্যত এই অনিয়মগুলোকে সমর্থন করেছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামতো কোম্পানির সিইও, সিএফও এবং কোম্পানি সচিবকে নিয়োগ ও অপসারণ করেন এবং এই সিদ্ধান্তগুলো বোর্ড মিটিংয়ের কার্যবিবরণীতে রেকর্ড করা হয়। যে পরিচালকই আপত্তি তোলেন, তাকে বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সাবেক পরিচালকরা জানান, তাদের অপসারণের কারণ এখনও অজানা এবং বারবার কারণ জানতে চেয়েও কোনো উত্তর মেলেনি, যা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ।
অভিযোগকারীদের মতে, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের এই অনিয়মগুলো সামগ্রিকভাবে বীমা খাতের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। তারা বিএসইসিকে অনুরোধ করেছেন যেন একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করে, কোনো আইনি লঙ্ঘন পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, অন্যায়ভাবে অপসারণ করা পরিচালকদের পুনর্বহাল করা হয় এবং বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, কর্পোরেট গভর্নেন্স ফিরিয়ে আনা এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।#
Posted ৭:৩৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy